তিন পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ: উত্তেজনা ও রাজনৈতিক পটভূমি


মইনুল ইসলাম রাজন: খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় মো. মামুন (৩০) নামক এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে স্থানীয় জনতার গণপিটুনির শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।

এই হত্যাকাণ্ডের পরের দিন, ১৯ সেপ্টেম্বর, দীঘিনালা কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ (মূল) সদস্যরা মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে প্রায় ২০-৩০ রাউন্ড গুলি চালায়। এই গুলিবর্ষণের জবাবে উত্তেজিত জনতা প্রতিশোধ হিসেবে বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মোট ছয় জন আহত হন, যাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অবস্থান নিয়ন্ত্রণে আনতে টহল:
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে টহল শুরু করে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে। সংঘর্ষের পর থেকে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

এই সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জরুরি বৈঠকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীকে যৌথভাবে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই এই টহল কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া, স্থানীয় নেতাদের সহিংসতা এড়াতে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজনৈতিক পটভূমি ও স্বাধীনতার প্রসঙ্গ:
সাম্প্রতিক এই ঘটনার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল এই অঞ্চলে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সক্রিয়তা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলনা করে অনেকে মনে করছেন, এই অঞ্চলেও নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং মায়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে উস্কে দিয়ে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সন্দেহভাজন সংস্থাগুলোকে কড়া নজরদারিতে রাখা। বিশেষ করে ইসকন ও বিদ্যানন্দের মতো সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এড়ানো সম্ভব হয়।